খলিফা হযরত ওমর রাদিয়াল্লাহুতালাআনহু

মুসলমানদের দ্বিতীয় খলিফা ওমর বিন খত্তাব খিলাফত হাতে নেন ২৩শে আগস্ট ৬৩৪ খ্রিস্টাব্দ (উইকি)। আরবী সন হিসেবে সেই তারিখটা হয় ১৩ হিজরী সনের ২২ জমাদিউস ছানী (http://bit.ly/2p6RdPl)।
আজকে তারিখ হচ্ছে ১৪৩৯ হিজরী সনের ২২শে জমাদিউস ছানী। অর্থাৎ আজ থেকে ১৪২৬ বছর পূর্বে এই দিনে মুসলমানদের দ্বিতীয় খলিফা খিলাফত হাতে নেন। এ্ই তারিখটা যদি মুসলমানরা স্মরণ রাখতো এবং এই দিনে মুসলমানদের দ্বিতীয় খলিফা ওমর বিন খত্তাবের খিলাফত সম্পর্কে আলোচনা করতো তবে অবশ্যই মুসলমানদের মধ্যে জেনারেশন গ্যাপ ও হীনমন্যতা দূর হতো। এবং বুঝতে পারতো খিলাফত শাসন ব্যবস্থাটা আসলে কেমন ? কারণ আমার ধারণা অনেকের মধ্যে প্রচার আছে, খিলাফত মানে মনে হয় মারামারি আর হাতকাটা আর পাথর ছুড়ে হত্যা করা। কিন্তু আসলে খিলাফত ব্যবস্থা কিভাবে পরিচালিত হতো সেটা কিন্তু মুসলমানরাও বলতে পারবে না।
সত্যিই বলতে বর্তমান যুগের প্রায় মুসলমানই ভাবে বর্তমান সভ্যতা ও নিয়ম কানুন মনে হয় অমুসলিমদের থেকে এসেছে। কিন্তু মুসলমানরা জানেই না, পৃথিবীর বেশিরভাগ সভ্যতার আগমন ‍মুসলমানদের হাত ধরে, বিশেষ করে দ্বিতীয় খলিফা ওমরের হাত ধরে। এজন্য দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী ও আম আদমি পার্টির প্রতিষ্ঠাতা অরবিন্দ কেজরিওয়াল বলেছিলো – “খলীফা ওমরের (ইসলামের দ্বিতীয় খলীফা) শাসনব্যাবস্থা আমাকে দারুনভাবে অনুপ্রাণিত করেছে। আমি জনসাধারনের উন্নতির লক্ষ্যে তার এই শাসনব্যাবস্থা অনুসরণ করার চেষ্টা করব।” (http://bit.ly/2IenfBT)
পাঠক ! একটু চিন্তা করে দেখুন, কেজরিওয়াল অমুসলিম হয়েও খলিফা ওমরের শাসন ও নিয়মনীতি সম্পর্কে জ্ঞাত এবং তার শাসন ব্যবস্থায় সেটা কাজে লাগাচ্ছে। কিন্তু আপনি মুসলমান হয়েও কি খলিফা ওমরের শাসন ব্যবস্থা সম্পর্কে কিছু জানেন ? আসুন আজকে খলিফা ওমর বিন খত্তাবের খিলাফত প্রাপ্তির দিবস (২২শে জমাদিউস ছানী) এর এই দিনে ইতিহাস থেকে তার খিলাফত সম্পর্কে কিছু জানি-
মুসলমানদের দ্বিতীয় খলিফা ওমর বিন খত্তাবের খিলাফতকাল ছিলো মাত্র ১০ বছর ৬ মাস। আজ থেকে ১৪০০ বছর আগে এ স্বল্প সময়ে তিনি খিলাফতি শাসন ব্যবস্থায় সামরিক, প্রশাসনিক, অর্থনৈতিক এবং আইন বিভাগসহ পরিচালনার জন্য সে সমস্ত নিয়মনীতি চালু করেন, তাই বর্তমান আধুনিক বিশ্ব চোখ বন্ধ করে অনুসরণ করে। যেমন :
(১) মজলিসে সূরা বা উপদেষ্টা বিভাগ চালু :
মুসলমানদের দ্বিতীয় খলিফা ওমর শাসনব্যবস্থাকে সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য সর্বোচ্চ ইসলামী আদর্শের ব্যক্তিদ্বারা মজলিসে শূরা বা উপদেষ্টা পরিষদ গঠন করেন। এই উপদেষ্টা পরিষদ আবার দু’ভাগে বিভক্ত করেছিলেন। যথা- উচ্চপরিষদ ও সাধারণ পরিষদ ।
(২) প্রদেশে বিভক্তীকরণ ও শাসনকর্তা নিয়োগ:
খলিফা ওমর শাসনব্যবস্থাকে সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য বিশাল মুসলিম সাম্রাজ্যকে ১৪টি প্রদেশে বিভক্ত করেন। যথা: মক্কা, মদীনা, সিরিয়া, আলজেরিয়া, বসরা, কূফা, মিসর, প্যালেস্টাইন, ফারস, কিরমান, মাকরান, খোরাসান, সিজিস্তান ও আজরবাইজান। শাসনব্যবস্থার বিকেন্দ্রীকরণের ফলে দূরবর্তী অঞ্চলেও সুষ্ঠুভাবে শাসনব্যবস্থার নিশ্চয়তা প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিটি প্রদেশকে জেলা ও মহকুমায় বিভক্ত করা হয়। প্রদেশের শাসনকর্তাকে ওয়ালী বা আমীরে শো’বা এবং জেলার শাসনকর্তাকে আমীন বলা হতো। তাছাড়া প্রাদেশিক সরকারের কার্যাবলী সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য বিভিন্ন কর্মচারী নিযুক্ত করতেন। যেমন কাজী (বিচারক), কাতিব (প্রধান উপদেষ্টা), কাতিব উল দিওয়ান (প্রধান সামরিক উপদেষ্টা), ছাহিব উল খারাজ (রাজস্ব উপদেষ্টা), ছাহিব উল আহদাত (পুলিশ উপদেষ্টা), ছাহিব উল বাইতুল মাল (কোষাধ্যক্ষ) ইত্যাদি।
(৩) বেতন- ভাতা ও বয়স্ক ভাতা বিভাগ:
খলিফা ওমর প্রশাসনিক কাঠামো গঠন করেই ক্ষান্ত ছিলেন না। বিভিন্ন কর্মকর্তা-কর্মচারীর যোগ্যতা, অভিজ্ঞতা, মেধা এবং ধর্মপালন অনুসারে বেতন-ভাতা নির্ধারণ করে দেন। তিনি বয়স্ক ভাতারও প্রচলন করেন। এজন্য আলাদা একটা বায়তুলমাল বিভাগ করেছিলেন, যেখান থেকে সবাইকে বেতন-ভাতা দেয়া হত। তাছাড়া দুর্নীতি এবং অনিয়ম প্রতিরোধের জন্যও তিনি কার্যকর পদক্ষেপ নেন। প্রাদেশিক শাসনকর্তাকে সর্বোচ্চ ৫০০০ দিরহাম পর্যন্ত বেতন-ভাতা দিতেন। এমন বেতন-ভাতা দিতেন যে সবাই সবার বেতন-ভাতায় সন্তুষ্ট থাকে, কেউ যেন দুর্নীতি করতে বাধ্য না হয়।
(৪) সামরিক বিভাগ:
তিনি সামরিক বাহিনীকে শক্তিশালী ও সুসংহত করার জন্য ৯টি সামরিক বিভাগ বা জুনদ বা ক্যান্টমেন্ট প্রতিষ্ঠা করেন। এগুলো হলো- মদীনা, কূফা, বসরা, ফুসতাত, মিসর, দামেস্ক, হিমস, প্যালেস্টাইন ও মসুল। এই ৯টি সামরিক ঘাঁটিতে সর্বদা ৪০০০ অশ্ব এবং ৩৬০০০ অশ্বারোহী সৈন্য প্রস্তুত রাখা হতো।
একটি সৈন্যবাহিনী কয়েকটি ভাগে বিভক্ত করেছিলেন এবং এক একটি ‘কায়দ’-এর বা ব্রিগ্রেড-এর অধীনে যুদ্ধ করতেন। এভাবে এক একটি সৈন্যবাহিনীতে দশটি কায়েদের বাহিনী রাখতেন। প্রতিটি কায়েদের বাহিনীতে একশত সৈন্য কর্মরত রেখেছিলেন। প্রতিটি কায়েদ আবার কয়েকটি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র উপদলে বিভক্ত করেছিলেন। দশজন সৈন্য নিয়ে গঠিত এ উপদলটির নেতৃত্ব দিতেন এক একজন আমীর উল আশ-রাহ। সৈন্যদের প্রারম্ভিক বেতন ছিল প্রথম বৎসরে ২০০ এবং পরে ৩০০ দিরহাম। খোরাক ও জিহাদীপোশাক বিনামূল্যে পেতেন এবং সৈন্যদের পরিবারও কোষাগার থেকে ভাতা লাভ করতো। সৈন্যদের ফ্রি চিকিৎসা ও স্বাস্থ্যকর পরিবেশে বসবাসের জন্য সর্বপ্রকার সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা রাখতেন।
(৫)বিচার বিভাগ ও ক্বাযী নিয়োগ:
খলিফা ওমর বিচার বিভাগের গঠন এবং উন্নতি বহুলাংশে প্রশাসনিক মেধার জন্য সম্ভবপর করেছিলেন। বিচারব্যবস্থা সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য তিনি প্রত্যেক প্রদেশে একজন প্রধান ক্বাযী (ক্বাযী-উল কুযাত বা প্রধান বিচারক) এবং প্রত্যেক জেলায় একজন ক্বাযী নিযুক্ত করেন। পূর্বে প্রাদেশিক গভর্নর (ওয়ালী) বিচার বিভাগের কার্যাবলীর পরিচালনা করতেন। ইসলামী আদর্শে আদর্শবান, নিষ্কলুষ চরিত্র, ব্যক্তিত্বসম্পন্ন নৈতিক শক্তিকে বলীয়ান, সুস্থ, শিক্ষিত ও ধর্মীয় বিষয়ে সম্যক জ্ঞানসম্পন্ন ব্যক্তিদের খলীফা মজলিসে শূরার সাথে পরামর্শ করে বিচারক বা ক্বাযী নিযুক্ত করতেন। কাজী বা বিচারকদের দুর্নীতি ও প্রলোভন থেকে দূরে রাখার জন্য যোগ্যতানুসারে উচ্চাহারে বেতন দিতেন এবং নির্ভয়ে ও নিরপেক্ষভাবে বিচারকার্য পরিচালনার জন্য খলীফা সর্বপ্রকার আশ্বাস প্রদান করতেন। বিচারের জন্য কোনো প্রকার ফি প্রদান করতে হতো না এবং মসজিদে সাধারণত মজলিশের সভা অনুষ্ঠিত হতো।
কুফা, বসরা, দামেস্ক ও হিমসের জন্য বিশেষ বিচারক নিযুক্ত করেছিলেন। খলীফা বিচার বিভাগের সর্বময় ব্যক্তি ছিলেন এবং প্রয়োজনে নিম্ন আদালতের রায় পুনর্বিবেচনা করতেন। বিধর্মীদের বিচারকার্য তাদের নিজস্ব অনুশাসনে পরিচালিত করার ব্যবস্থা রেখেছিলেন। খলিফা ওমরের কাছে ধনী-দরিদ্র, উচু-নীচু-আত্মীয়-স্বজন সকলেই সমান ছিলেন।
(৬) পুলিশ বিভাগ:
ইসলামের প্রথম দিকে কোন পুলিশ বিভাগ ছিলো না। তবে অপরাধমূলক কার্যকলাপ রোধ করে শান্তি ও নিরাপত্তা বজায় রাখার জন্য খলিফা ওমর সর্বপ্রথম একটি সুগঠিত পুলিশ বাহিনী প্রতিষ্ঠা করেন। এই বাহিনীর কার্যকলাপকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য দিওয়ান আল আহদাত নামে একটি পুলিশ বিভাগের সূচনা করেন। চুরি, ডাকাতি বন্ধ করা, ওজন পরীক্ষা, মাদকদ্রব্য বিক্রয় বন্ধ ও অবৈধ সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা পুলিশ বাহিনীর প্রধান দায়িত্ব ছিল। পুলিশ প্রধানের নাম রেখেছিলেন ছাহেব উল আহদাত।
(৭) কারাগার প্রতিষ্ঠা:
মুসলমানদের দ্বিতীয় খলিফার শাসনের অন্যতম প্রধান কৃতিত্ব ছিল কারাগার প্রতিষ্ঠা। গাফওয়ান বিন উমাইয়া নামক এক মুসলিমের বাসস্থান ৪০০ দিরহামে ক্রয় করে তিনি একে প্রথম জেলখানায় রূপান্তরিত করেন। মদীনায় কেন্দ্রীয় কারাগার বা জেলখানা ব্যতীত প্রত্যেক প্রাদেশিক রাজধানী ও জেলায় একটি করে কারাগার নির্মাণ করেন। সেখানে পর্যাপ্ত প্রহরী, খাবার, উপাসনার জায়গাসহ দরকারী সব জিনিস মজুদ রাখতেন। কোনোও অপরাধী প্রাপ্যের অতিরিক্ত কষ্ট যাতে পেতে না হয়ে তার সব ব্যবস্থা রেখেছিলেন। তার খিলাফতকালে সর্বপ্রথম নির্বাসন দণ্ড প্রবর্তিত হয়।
(৮) গোয়েন্দা বিভাগ:
মুসলমানদের দ্বিতীয় খলিফা শাসন ব্যবস্থাকে ইসলামী আদর্শযুক্ত, শত্রুমুক্ত, দুর্নীতিমুক্ত, সঠিক বিচার-ব্যবস্থার জন্য গোয়েন্দা বিভাগ প্রবর্তন করেন। প্রাদেশিক শাসনব্যবস্থা সম্বন্ধে সঠিক জ্ঞান লাভ করার জন্য গোয়েন্দা নিযুক্ত করেন এবং তাদের মাধ্যমে খলীফা খিলাফতী কর্মচারীদের উপর কঠোর দৃষ্টি রাখতে সক্ষম হন। কোথাও কোনো অনিয়ম বা অসুবিধা সৃষ্টি হলে সাথে সাথে খলীফাকে অবহিত করতো গোয়েন্দারা।
(৯) রাজস্ব আদায় ও হিসাব বিভাগ:
মুসলমানদের দ্বিতীয় খলিফা খিলাফতের অর্থনীতিকে শক্তিশালী ও মজবুত ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠা করার জন্য রাজস্ব ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন সাধন করেন। সুষ্ঠু কর প্রদানের মাধ্যমে খিলাফতের অর্থনৈতিক অচলাবস্থা দূর করে স্থিতিশীল ও বলিষ্ঠ প্রাশাসনিক কাঠামো গঠনের জন্য তিনিই প্রথম দৃঢ় পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। খিলাফতের আয়-ব্যয়ের হিসেব ঠিক রাখার জন্য তিনি ‘দিওয়ান’ নামে একটি রাজস্ব বিভাগ প্রবর্তন করেন। খিলাফতের রাজস্ব উৎস ছিল যাকাত, খারাজ, জিজিয়া, ফসলের উশর, আলফে, গনিমাহ, আল উশর ও হিমা।
(১০) কৃষিকাজ :
মুসলমানদের দ্বিতীয় খলিফা কৃষির উন্নতির জন্য অগ্রিম ঋণ দেয়ার প্রথা প্রবর্তন করেন। তিনি কৃষিভিত্তিক অর্থনীতির জন্য অগ্রিম খিলাফতী ঋণ দেয়ার প্রথা প্রবর্তন করেন। তিনি কৃষিভিত্তিক অর্থনীতির উন্নতিকল্পে আইন বিন্যস্ত করে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি করার ব্যাপক প্রয়াস চালান। কৃষির উন্নতির জন্য তিনি খাল খনন ও বাঁধ নির্মাণ করেন। তিনি কৃষিকাজ, ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসারের জন্য আরব ও মিসরের মধ্যে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি করেন এবং বাণিজ্য শুল্ক লাঘব করেন। পারসিক ও রোমান শাসনামলে যারা জমিজমা হতে বঞ্চিত হয়েছিল খলীফা তাদের সেসব জমিজমা ফিরিয়ে দিয়ে তাদের কৃষিকাজ করার সুযোগ দান করেন। যেখানে ফসল উৎপদন কম হতো সেখানে বেশি উৎপদিত এলাকা থেকে দ্রত খাবার সরবরাহের ব্যবস্থা রাখতেন। যার জন্য কোথাও খাদ্য সঙ্কট হতো না।
(১১) আদমশুমারি ও জরিপ:
মুসলমানদের দ্বিতীয় খলিফা জাতীয় অর্থের সুষ্ঠু বণ্টনের জন্য সর্বপ্রথম লোকগণনা বা আদমশুমারি ও জরিপের ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। মূলত সব বিষয়ে সুষম বণ্টনকার্য সম্পন্ন করার জন্য একটি আদমশুমারির প্রয়োজন হয় এবং পৃথিবীর ইতিহাসে রাজস্ব বণ্টনের ক্ষেত্রে এটাই সর্বপ্রথম লিপিবদ্ধ আদমশুমারি। আদমশুমারির মূল উদ্দেশ্য ছিলো:
ক. কোথায় কি পরিমাণ খাদ্য উৎপাদন হয়, কোথায় খাদ্য কম বা বেশি আছে, কি পরিমাণ খাদ্য দরকার প্রভৃতি নির্ণয় করা।
খ. মোট চাষাবাদের জমির পরিমাণ কতটুকু, বর্তমানে চাষবাদ কতটুকু করা হচ্ছে, বাকিগুলো জমিতে চাষাবাদ না হওয়ার কারণ, কি পরিমাণ ফসল উৎপাদন করা সম্ভব এবং এখন কি পরিমাণ দরকার প্রভৃতি নির্ণয় করা।
গ. মোট জনসংখ্যা কত, কোন কোন প্রদেশে, জেলায়, মহকুমায় কি পরিমাণ মানুষ বেশি/কম আছে বা জন বসতি বেশি/কম আছে, কেন বেশি/কম, সুষম বণ্টন করতে কি কি দরকার প্রভৃতি নির্ণয় করা।
ঘ. কোন প্রদেশে, জেলায়, মহকুমায় মসজিদ-মাদ্রাসা কি পরিমাণ বা বেশি বা কম আছে, কতগুলো কোথায় লাগবে, ইমাম-মুয়াজ্জিন-মুয়াল্লিম বেশি, না কম আছে প্রভৃতি নির্ণয় করা।
ঙ. রাস্তা-ঘাট-পুল-খাল বা নদী-নালা কোথায় কি পরিমাণ বেশি/কম আছে প্রভৃতি নির্ণয় করা।
চ. শিক্ষা ও চিকিৎসাকেন্দ্র, প্রশাসনিক ভবন, বিভিন্ন মজলিসে সূরার ভবন, কাজীর ভবন প্রভৃতি কি পরিমাণ বেশি বা কম আছে তা নির্ণয় করা।
ছ. খিলাফতের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিবর্গ কোথায় কি পরিমাণ বা বেশি/কম আছে তা নির্ণয় করা।
জ. খিলাফতের আওতায় কি পরিমাণ অমুসলিম আছে, কোন কোন ধর্ম কি পরিমাণ লোক পালন করে তা নির্নয় করা।
ঝ. জাকাত-ওশর, কর বা জিযিয়া কর কোথায় কি পরিমাণ আদায় হয় বা হয় না তা নির্ণয় করা।
ঞ. কোন প্রদেশে, জেলায়, মহকুমায় শিক্ষার হার শিক্ষিত, মূর্খ বা অশিক্ষিত কি পরিমাণ আছে তা নির্নয় করা।
এরকম শত শত বিষয়ে পৃথিবীর ইতিহাসে প্রথম আদমশুমারি ও জরিপ ব্যবস্থা প্রবর্তন করেন মুসলমানদের ২য় খলিফা। খিলাফতের রাজধানী বা প্রাণকেন্দ্র হিসেবে প্রশাসনিক কাজে মদীনাকে কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করতেন। অন্যান্য বিষয় প্রদেশ, জেলা, মহকুমায় প্রায় সমহারে রাখতেন। প্রশাসনির কাজে এক প্রদেশ, জেলায়, মহকুমায় সবাই ভিড় লাগাতে পারতো না। প্রয়োজনও হতো না। কেননা সব জায়গায় সমান হারে সব কিছু রেখেছিলেন তিনি। যা পৃথিবীর ইতিহাসে বিকেন্দ্রীকরণ শাসন ব্যবস্থার একক এবং অদ্বিতীয়। বলাবাহুল্য ১৪০০ বছর পর বর্তমানে বাংলাদেশও বিকেন্দ্রীকরণ শাসন ব্যবস্থা চালু করতে পারে নাই, সব কিছু ঢাকা কেন্দ্রীক হওয়ায় জনসংখ্যা বেড়ে ঢাকা পরিণত হয়েছে অযোগ্য নগরীতে।
(১২) জনহিতকর কাজ:
জনহিতকর কার্যাবলী ছিল মুসলমানদের ২য় খলিফার শাসনব্যবস্থার একটি প্রধান বৈশিষ্ট্য। তার শাসনামলে অসংখ্য মসজিদ, জ্ঞান চর্চার কেন্দ্র তথা মাদরাসা-মক্তব, লঙ্গরখানা, হাম্মামখানা, খাল, রাস্তা, সেতু, দুর্গ, হাসপাতাল প্রভৃতি জনকল্যাণমূলক ও প্রশাসনিক ভবন বিভিন্ন জেলায় জেলায় এমনকি মহল্লায় মহল্লায় গড়ে উঠে। সব জায়গায় প্রায় সমহারে সব বিষয়গুলি রাখতেন। কিছু দূর দূর রাস্তার পথচারীর জন্য পানি এবং বিশ্রাম নেয়ার মতো ব্যবস্থা রেখেছিলেন পুরো খিলাফতী এলাকা জুড়ে। জনগণের পানির অসুবিধা দূর করার জন্য তিনি টাইগ্রীস নদী হতে বসরা পর্যন্ত দীর্ঘ ৯ মাইল খাল খনন করেন। এছাড়া সর্বাপেক্ষা উল্লেখযোগ্য খাল ছিল আমিরুল মুমেনীন খাল। লোহিত সাগর থেকে নীলনদের সংযোগ রক্ষাকারী এ খাল ব্যবসা-বাণিজ্যের পথকে সুগম করেছিলেন। তিনি কুফা, বসরা ও ফুসতাত নামে তিনটি নতুন শহরের ভিত্তি স্থাপন করেন। এই তিনটি শহর পরবর্তীকালে বিশ্বের জ্ঞান-বিজ্ঞানের শ্রেষ্ঠ কেন্দ্রে পরিণত হয়। উদাহরণস্বরূপ: সেসময় ফুসতাত শহরে ৩৬টি মসজিদ, ৮০০ সড়ক এবং ১১৭০টি গোসলখানা (হাম্মামখানা) করেছিলেন।
(১৩) হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা :
তিনি প্রতিটি শহরে চিকিৎসা ব্যবস্থার জন্য হাসপতাল গড়ে তুলেছিলেন।
(১৪) জনসাধারণের খোঁজে রাতের আঁধারে মরু পথে:
জনগণের কল্যাণে তিনি সর্বদাই নিয়োজিত থাকতেন। জনসাধারণের অবস্থা চাক্ষুস দেখার জন্য তিনি অলিতে গলিতে রাতের আঁধারে ঘুরে বেড়াতেন এবং অসহায় মানুষের কাছে নিজ হাতে সাহায্য পৌঁছে দিতেন। পৃথিবীর ইতিহাসে এর কোনোও নজির নেই। পারবে না কোনোও রাজা-বাদশাহ এই কাজের উদাহরণ হতে।
(১৫) হিজরী সন গণনা শুরু:
মুসলমানদের শেষ নবীর হিজরত ১ম সন ধরে মুসলমানদের ২য় খলিফা সর্বপ্রথম হিজরী সনের প্রবর্তন করেন। হিসাব-নিকাশ ও অন্যন্য কাজের জন্য যা অত্যন্ত দরকারী বিষয়।
(১৬) মুসলমানদের জন্য সংরক্ষিত আরবভূমি :
মুসলমানদের ২য় খলিফার শাসনব্যবস্থার অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য ছিল আরব ভুমিকে (জাজিরাতুল আরব) অক্ষুন্ন রাখা। আরব জাতির বৈশিষ্ট্য ইসলামী আদর্শের প্রতি দৃঢ়তা বজায় রাখার জন্য তিনি প্রধানত দুটি নীতি অনুসরণ করেন। প্রথমত, আরব উপদ্বীপকে সম্পূর্ণরূপে আরব মুসলমাদের বাসভূমিতে পরিণত করার জন্য শত্রুভাবাপন্ন ইহুদি ও খ্রিস্টানদেরকে আরব দেশের বাইরে বসবাসের নির্দেশ দেন। দ্বিতীয়ত, খলিফা ওমরের নির্দেশ ছাড়া আরবদেশের বাইরে মুসলিম সৈন্যদের জমি ক্রয় এবং চাষাবাদ নিষিদ্ধ করেছিলেন।
মজার ব্যাপার হচ্ছে, বর্তমানে মুসলমানদের তাদের প্রাথমিক যুগের ইতিহাস হিসেবে এমন কিছু বিষয় পাঠ করতে দেয়া হয়, যেন মুসলমানরা ধারণা করে- প্রাথমিক খিলাফতের যুগে মুসলমানরা মনে হয় শুধু নিজেদের মধ্যে মারামারি কাটাকাটি করে দিন পার করতেন। এবং খিলাফত বলতে বুঝে, হাতকাটা আর পাথর ছুড়ে হত্যা। কিন্তু প্রাথমিক খিলাফতি যুগে মুসলমানরা কি এমন করলেন যে প্রায় ১২০০ বছর পৃথিবী জুড়ে একচেটিয়া মুসলমানরা সুপার পাউয়ার হিসেবে কর্তৃত্ব করেছেন, সেটা কিন্তু আলোচনা হয় না। আমার মনে হয়, বিভিন্ন উপলক্ষ বা দিবসকে টার্গেট করে এসব ইতিহাস নিয়ে আলোচনা করলে মুসলমানদের হীনমন্যতা ও জেনারেশন গ্যাপ প্রায় পুরোটা দূর করা সম্ভব।
আরেকটি কথা, উপরের ইতিহাসগুলো যে একেবারে দুর্লভ তা কিন্তু নয়। মুসলমানদের দ্বিতীয় খলিফা ওমরের অধিকাংশ জীবনীগ্রন্থগুলোতেই এসব ইতিহাস পাওয়া যায়। তবে এখন যেটা দরকার সেটা হলো মুসলমানদের শিক্ষাক্ষেত্র বা পাঠ্যপুস্তকে এই ইতিহাসগুলো সংযুক্ত করা। একজন শিশুকে যদি ছোটবেলা থেকে এই ইতিহাসগুলো সম্পর্কে ধারণা দেয়া যায়, তবে মুসলমান বাচ্চারা ছোটবেলা থেকেই সঠিক চেতনা, ইতিহাস-ঐতিহ্য জেনে বেড়ে উঠতে পারবে, যা আগামীতে সচেতন মুসলিম তৈরীকে বিরাট ভূমিকা রাখবে।
শের ই হিন্দ - Muslim Warriors foto.

Kommentarer

Populära inlägg i den här bloggen

সি আই এ মোসাদ এর প্রজেক্ট হলো ইনসেস্ট তথা বাবা-মেয়ে,মা-ছেলে, ভাই-বোন অবৈধ সম্পর্ককে প্রমোট করা।

পতিতা ব্যবসায়ী রবীন্দ্রনাথ এবং দালাল মিডিয়া

বাংলাদেশে পতিতাদের সংগঠনগুলোই বলছে- বাংলাদেশে ১৮ বছরের নিচে পতিতাদের সংখ্যা ৬৪% এবং তারা আরো জানাচ্ছে, ৯০% পতিতা তাদের দেহব্যবসা শুরু করে শিশু বয়স থেকেই।