নিজেদের পূর্বপুরুষদের ইতিহাস থেকে আমাদের বোধ জাগ্রত করতে হবে
নিজেদের পূর্বপুরুষদের ইতিহাস থেকে আমাদের বোধ জাগ্রত করতে হবে
আমরা বাঙালি মুসলমান। সাতচল্লিশে আমাদেরই পূর্বপুরুষেরা সৃষ্টি করেছিলেন মুসলমানদের আলাদা ভূমি ‘পাকিস্তান’। এই ‘পাকিস্তান’ সৃষ্টির ইতিহাস হলো বোধোদয়ের ইতিহাস, হিন্দু সাম্প্রদায়িকতাকে উপলব্ধির ইতিহাস। কারণ যেসব মুসলমান নেতারা পাকিস্তান সৃষ্টি করেছিলেন, তারা সকলেই শুরুতে ছিলেন কংগ্রেসের নেতা ও কর্মী। কংগ্রেসী এসব বাঙালি মুসলমান হিন্দুদের সাম্প্রদায়িকতার স্বরূপ দর্শন করেই মৃতপ্রায় মুসলিম লীগে যোগদান করে তাকে সজীব করে তুলেছিলেন, সৃষ্টি করেছিলেন মুসলমানদের আলাদা ভূমি ‘পাকিস্তান’। পূর্বপুরুষদের সেই বোধোদয়ের ইতিহাস বর্তমানে বাঙালি মুসলমানদের জানা দরকার, যদি তাতে তাদের হিন্দুপ্রীতির মোহ কাটে তো আলহামদুলিল্লাহ।
পাকিস্তান সৃষ্টিতে যে সংবাদপত্রটি সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রেখেছিলো বলে মনে করা হয়, তা হলো কলকাতা থেকে প্রকাশিত মওলানা আকরম খাঁ’র সম্পাদিত ‘আজাদ’ পত্রিকাটি। এই মওলানা আকরম খাঁ প্রথমজীবনে ছিলেন কংগ্রেসের চিত্তরঞ্জন দাশের সহযোগী। এই চিত্তরঞ্জন দাশ পরবর্তীতে ‘বেঙ্গল প্যাক্ট’ নামক একটি চুক্তি করে, যেখানে মুসলমানদের চাকরিতে কোটা দেয়ার কথা উল্লেখ ছিলো।
কিন্তু কংগ্রেসের অধিকাংশ হিন্দু কর্মীই ছিলো সাম্প্রদায়িক ও সন্ত্রাসবাদী। চিত্তরঞ্জন দাশের মৃত্যুর পর তারা এই ‘বেঙ্গল প্যাক্ট’ বাতিল করতে সর্বশক্তি নিয়োগ করে। তখন মওলানা আকরম খাঁ, বীরেন্দ্রনাথ শাসমলের মতো নেতারা কংগ্রেসের এই উগ্র হিন্দুত্ববাদীদের প্রতিহত করার চেষ্টা করে। কিন্তু গান্ধীর প্রশ্রয়ে লালিত সন্ত্রাসবাদী হিন্দুদের সাথে তারা পেরে উঠে না। বীরেন্দ্রনাথ শাসমলকে বহিষ্কার করা হয়, যার জের ধরে মওলানা আকরম খাঁ কংগ্রেস থেকে পদত্যাগ করেন।
এগুলো বানানো ইতিহাস নয়। বীরেন্দ্রনাথ শাসমলের ছেলে বিমলানন্দ শাসমলের ‘ভারত কী করে ভাগ হলো’ বইতেই এসব ঘটনার উল্লেখ রয়েছে। পরবর্তীতে এই আকরম খাঁ-ই ‘আজাদ’ পত্রিকা প্রতিষ্ঠা করে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠায় অন্যতম ভূমিকা রাখেন। এরকম আরো অনেক উদাহরণ রয়েছে। যেমন ১৯৪০-৬২ সাল পর্যন্ত আজাদ পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন আবুল কালাম শামসুদ্দীন, যাঁকে বলা হয় বাঙালি মুসলিম সাংবাদিকতার পথিকৃত। এই আবুল কালাম শামসুদ্দীন ছাত্রাবস্থায় গান্ধীর আহবানে সাড়া দিয়ে ভার্সিটি পরীক্ষা পর্যন্ত বর্জন করেছিলেন। (http://goo.gl/sGGVbp)
কংগ্রেসের পোড়খাওয়া কর্মী এই মুসলমান ব্যক্তিত্বরা পরবর্তীতে কেন, কোন তাড়নায় পাকিস্তান চাইলেন, তা আমাদের চিন্তা করতে হবে। চিন্তা করতে হবে, হিন্দুদের সাম্প্রদায়িকতা কতোটা তীব্র ছিলো বিধায় আমাদের পূর্বপুরুষেরা কংগ্রেস ছেড়ে মুসলিম লীগে যোগদান করেছিলেন। আফসোস, আমরা ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিতে পারি না। নিজেদের পূর্বপুরুষদের ইতিহাস থেকে আমাদের বোধ জাগ্রত করতে হবে, নইলে কাশ্মীর কিংবা ফিলিস্তিনের মুসলমানদের মতো বোধোদয় হওয়ার দুর্ভা্গ্য আমাদেরকে বরণ করে নিতে হবে।

Kommentarer
Skicka en kommentar